STORY BEHIND THE SONG  । গানের পিছনের গল্প

” ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো “

স্রষ্টারা আড়ালে, কিন্তু অমরত্ব নিয়ে গানটা থেকে গেল।

শিল্পীঃ মান্না দে
সুরকারঃ অজয় দাস
গীতিকারঃ শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

গানের লিরিক্স পড়ুন এখানে ” ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো “

একটি গান ও লুকিয়ে থাকা ইতিহাস “ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো।” গানটি কার লেখা? এই নিয়ে একটা কুইজ হয়ে যেতে পারে। চাইলে, নিজের পরিচিত মহলে এই প্রশ্নটি রাখতে পারেন। দেখুন, নানা রকম উত্তর পাবেন। কেউ বলবেন, এটি দ্বিজেন্দ্রলালের লেখা। কেউ বলবেন, রবীন্দ্রনাথের লেখা। আরও কিছু নাম ভেসে আসতে পারে। কিন্তু এই দুটো উত্তরই বেশি পাবেন। বাঙালির পনেরোই আগস্ট যে গানটা অনিবার্য, সেই গান সম্পর্কে, তার স্রষ্টাদের সম্পর্কে আমরা একেবারেই উদাসীন। না, দ্বিজেন্দ্রলাল বা রবি ঠাকুর, কারও গানই নয়। গানের শেষ স্তবক মনে করুন, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বীর সুভাষের মহান দেশ। রবি ঠাকুর নিশ্চয় নিজেকে নিয়ে এমন কথা লিখবেন না। আর দ্বিজেন্দ্রলাল ? তাঁর যখন মৃত্যু হয়, তখন সুভাষচন্দ্রের বয়স আঠারো পেরোয়নি। তিনিও নিশ্চয় ‘বীর সুভাষের মহান দেশ’ লিখবেন না। তাহলে ? আসলে, এই গানটা লেখা হয়েছিল তার অনেক পরে, সাতের দশকে। লিখেছিলেন শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর দিয়েছিলেন অজয় দাস। গেয়েছিলেন মান্না দে। না, এটা মোটেই দেশাত্মবোধক গান হিসেবে তৈরি হয়নি। চিন্ময় রায় অভিনীত চারমূর্তি ছবিটা নিশ্চয় দেখেছেন। সেখানে চিন্ময় ছিলেন টেনিদা-র ভূমিকায়। সেই ছবির জন্যই গানটা লেখা হয়েছিল। চিন্ময়কে গান গাইতে বলা হবে, তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে একটি প্যারোডি গান গাইবেন, এই সিকোয়েন্সে গানটি তৈরি হয়। সেই চারমূর্তি ছবিতেই প্রথবার গানটি ব্যবহার করা হয়। পরে এই গানটাই যে এমন দেশাত্মবোধক গানের চেহারা পাবে, কে জানত! গানের গীতিকার ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, সুরকার অজয় দাস বছর দুই আগেও বেঁচে ছিলেন। তাঁরা দুজনেই ভাবতে পারেননি এই গান প্রায় আড়াইশো স্কুলের প্রার্থনা সঙ্গীত হয়ে উঠবে। অজয় দাস বলেছিলেন, আমাকে বলা হয়েছিল, একটা প্যারোডি সুর করতে। বঙ্গ আমার, জননী আমার- দ্বিজেন্দ্রলালের এই গানের আদলে সুর করেছিলাম। তাই হয়ত অনেকে বলে থাকেন, এটা দ্বিজেন্দ্রলালের গান। আর গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ? তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি কখনই ভাবিনি, এটা একদিন স্বদেশ পর্যায়ের গান হয়ে উঠবে। আগে থেকে এত ভাবলে হয়ত লিখতেই পারতাম না। ছবিটা বেরোনোর কয়েক বছর পরই গানটা অদ্ভুতভাবে জনপ্রিয় হতে শুরু করল। আমি যে গানটা লিখেছি, আমার পরিচিত লোকেরাও বিশ্বাস করত না।’ হ্যাঁ, অনেকবার অনেক কষ্টও এনে দিয়েছে এই গানটা। শিবদাসবাবুর বাড়ির আশেপাশেই হয়ত পনেরোই আগস্ট তারস্বরে এই গান বাজছে। জানালা দিয়ে কানে আসছে। কিন্তু পতাকা তোলার জন্য তাঁকে ডাকা হয়নি। এমনকি মঞ্চে অতিথিদের তালিকাতেও জায়গা হয়নি। কারণ, এই গানের রচয়িতা যে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই থাকেন, এটা উদ্যোক্তাদের অনেকেই হয়ত জানতেন না। বা জানলেও ডাকার প্রয়োজন মনে করেননি। তখন নিজের সৃষ্টির জন্য নীরবে দীর্ঘশ্বাসও ফেলেছেন মানুষটি। গীতিকার, সুরকার, গায়ক- কেউই আর বেঁচে নেই। পরপর লাইন দিয়ে যেন চলে গেলেন। গানটা তো অমরত্ব পেয়েছে। তাই সে থেকে গেল।

As an Amazon Associate, I earn from qualifying purchases at no extra cost to you.

Added by

admin

SHARE